দীর্ঘদিন ধরে ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের ট্রাভেল পাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ভারত সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না বলে দাবি করছেন। নতুন করে ফের ট্রাভেল পাশের জন্য তিনি বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করবেনও বলেও তিনি জানিয়েছেন।
শুক্রবার তিনি আমাদের সময় ডটকমকে টেলিফোনে জানান, যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে যায় তাদের ট্রাভেল পাস দেয়া হয়। এটা মূলত পাসপোর্টের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ভারতের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য এই পাস কাজে লেগেছে। কিন্তু এটা দিয়ে ভারতের ইমিগ্রেশন পার হওয়া যায় না। দেশে ফেরার জন্য তার ‘এক্সিট পাস’ প্রয়োজন। তাই ট্রাভেল পাসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে তিনি দূরে কোথাও যেতেও পারবেন না। তিনি বর্তমানে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করছেন।
Close PlayerUnibots.in
সালাহ উদ্দিনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাভেল পাস পাওয়ার পর তিনি দেশে ফেরার আগে আগে দিল্লিতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে এসেছেন। কিন্তু মেঘালয় রাজ্য সরকার নয়াদিল্লি থেকে তাকে ফেরানোর ব্যাপারে এখনো অনুমোদন পাননি। সালাহউদ্দিন আহমদ খালাস হওয়ার পর আদালতের আদেশের কপিসহ প্রত্যাবর্তনের জন্য আবেদন করেছিলেন মেঘালয় পুলিশ দপ্তরে। মেঘালয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে, কিন্তু তারা কোনো জবাব পায়নি।
এদিকে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন গত ১২ জুন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে যে ট্রাভেল পাস ইস্যু করেছিল তাতে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে তাকে দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে ভারতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনার রুহুল আমিন আমাদের সময় ডটকমকে বলেছেন, বিদেশ গিয়ে যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। তাদেরকে ‘ট্রাভেল পাস’ দেয়া হয়। সেটা নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া যায়। বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে যে ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়ে তিনি দেশে ফিরতে পারতেন। কিন্তু কেনো তিনি দেশে ফেরেননি সেটা তার বিষয়।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ করার সময় ওই বছরের ১১ মে তাকে আটক করে শিলং পুলিশ। তার নামে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা করা হয়।
তিনি শিলং পুলিশকে জানান, গোয়েন্দা পরিচয়ে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ তাকে তার উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। একটি প্রাইভেটকারে তাকে শিলং নেওয়া হয়। কিন্তু গাড়িটি কোথা থেকে ছেড়েছিল বা গাড়িতে আর কে বা কারা ছিল তা তিনি বলতে পারেননি।
মেঘালয়ে যখন আটক হন, তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাহউদ্দিন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে তাকে খালাস দেন ভারতের একটি আদালত। সেই সময় তিনি বলেছিলেন- ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। দ্রুত দেশে ফিরে যেতে চাই।’ তবে আদালতের এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে থেমে যায় সালাউদ্দিনের দেশে ফেরা। তবে সেই আপিল খারিজ করে দিয়েছেন শিলংয়ের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনারের আদালত। এখন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ এলেও কারা তাকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে শিলংয়ে নিয়ে এসেছিল সে বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত থেকে গেল।
তিনি জানান, গত ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ ডকুমেন্টের জন্য ভারতের আসামের গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন। সুত্র: আমাদের সময়
পাঠকের মতামত